বেনাপোল প্রতিনিধিঃ
যশোরের বেনাপোল চেকপোস্টে বৈধ পথে চোরাচালান প্রতিরোধের অজুহাতে বাঁশের বেড়া দিয়ে গত ৩ মাস ধরে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অবরুদ্ধ করে রেখেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) র ৪৯ ব্যাটলিওনের সদস্যরা । এর ফলে বিভিন্ন সি এন্ড এফ এজেন্ট,ট্রাভেল এজেন্সি, মানি চেঞ্জার, আবাসিক হোটেল,পরিবহন কাউন্টার এবং অন্যান্য ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পথে।
গত ১২ ডিসেম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) র ৪৯ ব্যাটলিয়নের সেকেন্ড ইন কমান্ড অফিসার তার বিজিবি সদস্যদের নিয়ে বাশের বেড়া নির্মাণ করে চৌধুরী মার্কেটটির সামনে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিজিবির এই সিদ্ধান্তের কারণে চেকপোস্ট এলাকার স্বাভাবিক কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই পরিস্থিতি তাদের ব্যবসার ওপর বিপর্যয় ডেকে এনেছে। অনেকে তাদের কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না, এমনকি দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বেনাপোল চেকপোস্ট চৌধুরী মার্কেটের মালিক দুলাল চৌধুরী জানান, হঠাৎ করে বিজিবির সদস্যরা আমাদের মার্কেটের সামনে বাশের বেড়া নির্মাণ করে।এসময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেড়া নির্মাণে অভিযোগ জানালে বিজিবির সেকেন্ড ইন কমান্ড জানান বর্ডার কন্ট্রোল করতে এটি মাত্র ৩ দিনের জন্যে ঘিরে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হলেও বেড়া টি তিনি স্থায়ি ভাবে রেখে দিয়েছেন। এতে মার্কেটের ক্রেতারা আসা যাওয়া করতে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় মার্কেট টি অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে। অমানবিক এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা না হলেও আগামী তে ব্যবসায়ীরা সরকারি ট্যাক্স বন্ধ সহ মানব বন্ধনের পথে হাটবে।
বেনাপোল চেকপোস্ট চৌধুরী মার্কেটে অবস্থিত (সি এন্ড এফ এজেন্ট) আউলিয়া এন্টারপ্রাইজ এর সত্বাধিকারী তৌহিদুজ্জামান বলেন, আমার অফিসের সামনে বিজিবির বাশের বেড়া থাকায় আমার অফিসের যাতায়াতের অসুবিধা ও আমার অফিসের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে।এতে আমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। আমি মনে করি, অপ্রয়োজনীয় কারণে শত শত মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকা একটি মার্কেটের সামনে বাশের এমন বেড়া নির্মাণ মানবাধিকার লঙ্ঘন।
বেনাপোল চেকপোস্ট ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি, ইদ্রিস আলী ইদু জানান, মার্কেটের সামনে বেড়া দিয়ে মার্কেট অবরুদ্ধ করে রাখা নাগরিক অধিকার হরণ করার সামিল। আমরা বেড়া তুলে নেওয়ার বিষয়ে বিজিবিকে বারবার বলছি কিন্তু বিজিবি কর্ণ পাত করছেনা।
চৌধুরী মার্কেটের যশোর মানি চেঞ্জার এর ম্যানেজার মোঃ মাসুদ পারভেজ বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে বাশের বেড়া থাকায় পাসপোর্ট যাত্রীরা মানিচেঞ্জ করতে পারছে না । এতে আমার ব্যবসা ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছে এবং পাসপোর্ট যাত্রীরাও সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে।
বেনাপোল চেকপোস্টের চৌধুরী মার্কেটে অবস্থিত ফাইভ স্টার পরিবহন,রাজকীয় পরিবহন, আরপি পরিবহন, মামুন পরিবহন,আরমান পরিবহন, কুয়াকাটা এক্সপ্রেস,আল-আরাফা এক্সপ্রেসসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত।মামুন পরিবহন এর ম্যনেজার মাসুদুর রহমান কাক্কু ও চাকলাদার পরিবহন এর ম্যানেজার মফিজুর রহমান বলেন, আমাদের পরিবহন কাউন্টার এর সামনে বাশের বেড়া দেওয়ায় যাত্রীরা আমাদের কাউন্টারে আসা-যাওয়া ও ল্যাগেজ আনা নেওয়ায় বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। তাতেই আমাদের পরিবহনের স্টাফরা অর্থনৈতিক ভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর হওয়ায় এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত হয়। ফলে ট্রাভেল এজেন্সি, মানি চেঞ্জার,পরিবহন কাউন্টার,আবাসিক হোটেল ও কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্টসহ ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাশের বেড়া দেওয়ায় কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বেনাপোল চেকপোস্টে দোকানদার ও ব্যবসায়িদের নিয়ে একটা সমিতি রয়েছে যার নাম বন্দর চেকপোস্ট ব্যবসায়ি সমিতি। সমিতির নেতারা বারবার বিজিবিকে বাশের বেড়া তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও তিন (৩) দিনের কথা বলে দেওয়া বেড়া তিন মাস অতিবাহিত হলেও বিজিবি তুলছে না। ব্যবসায়ী নেতারা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন,বৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া কোনোভাবেই সমাধান হতে পারে না। আমরা বিজিবির উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ও সরকারের হস্তক্ষেপ চাই।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে চেকপোস্ট এলাকায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে ব্যবসায়ীরা ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
বেনাপোলের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই ধরনের পদক্ষেপ ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ নষ্ট করছে এবং পাসপোর্ট যাত্রীদের ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, কত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয় এবং ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারেন।
0 মন্তব্যসমূহ