Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Responsive Advertisement

বেনাপোলের নামে অনলাইনে প্রতারণা: বিশ্বাস ভাঙার নতুন ফাঁদ



বেনাপোল থেকে রাজু আহমেদ: 

বেনাপোল, সীমান্ত শহর হিসেবে পরিচিতি পেলেও এখন এর নামটি ব্যবহৃত হচ্ছে এক ভিন্ন উদ্দেশ্যে – অনলাইনে প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া সংঘবদ্ধ চক্রগুলো "বেনাপোল" নামকে পুঁজি করে ভারতীয় পণ্যের লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ঠকাচ্ছে। ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইলের মাধ্যমে তারা মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে তাদের প্রতারণার জালে ফেলছে।

প্রতারকরা সাধারণত "বেনাপোল বর্ডার ক্রস বাইক", "অনলাইন শপ", "ইন্ডিয়ান প্রোডাক্ট ইন বাংলাদেশ" ইত্যাদি নামে পেজ খোলে। এসব পেজে ভারতীয় বর্ডার ক্রস বাইক, কাস্টমস বাইক, মোবাইল, ক্যামেরা, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন পণ্যের আকর্ষণীয় ছবি ও অবিশ্বাস্য কম দামের অফার দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা হয়। তাদের মূল কৌশল হলো ক্রেতাকে অগ্রিম টাকা দিতে উৎসাহিত করা। বাইকের ক্ষেত্রে বলা হয়, ডেলিভারি চার্জ বাবদ মাত্র ৩০০০-৪০০০ টাকা অগ্রিম দিলেই হবে, বাইক হাতে পাওয়ার পর বাকি টাকা পরিশোধ করা যাবে। এভাবেই সরলমতি ক্রেতাদের বোকা বানিয়ে তারা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

ঢাকার কামরুল হোসেন নামে প্রশাসনের এক যুবক জানান, তিনি "অনলাইন শপ" নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে একটি ফ্রিজ অর্ডার করেন। ক্যাশ অন ডেলিভারির কথা থাকলেও, দুদিন পর ডেলিভারি ম্যান পরিচয়ে এক ব্যক্তি ফোন করে বলেন, পণ্য পাঠানোর জন্য কোড লাগবে এবং কোড পেতে হলে টাকা আগে পাঠাতে হবে। সরল বিশ্বাসে টাকা পাঠানোর পর থেকে ওই পেজটি বন্ধ এবং কোনো যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

একইভাবে, নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টকর্মী সাবিনা আক্তার ১২০০ টাকা অগ্রিম দিয়ে একটি সাইকেল অর্ডার করেছিলেন। কিন্তু টাকা পাঠানোর পর পেজ ও বিকাশ নম্বর উভয়ই বন্ধ পান তিনি।

বেনাপোল পোর্ট থানায় প্রতিনিয়ত এমন অভিযোগ জমা পড়ছে। জেলা গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানে কিছু প্রতারক গ্রেফতার হলেও, এই প্রতারণার ঘটনা থেমে নেই। নতুন নামে পেজ খুলে অসংখ্য চক্র নানা কৌশলে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারণার ধরন দিনদিন বদলাচ্ছে। সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মানুষকে আরও সচেতন হওয়ার এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া অনলাইনে কোনো পণ্য অর্ডার না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

বেনাপোলের নাম ভাঙিয়ে অনলাইন প্রতারণা এখন সীমান্ত ছাড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রতারণার ধরন যতই পাল্টাক না কেন, এর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন প্রশাসনের কঠোর অবস্থান, প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত, এবং সর্বোপরি সর্বস্তরে জনসচেতনতা। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ