বেনাপোল থেকে রাজু আহমেদ:
যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানাধীন ছোট আঁচড়া এলাকায় ষোল বছর বয়সী এক কিশোরী, মোসা: মিথিলা, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে নাভারন হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনাকে ঘিরে এলাকাজুড়ে শোকের পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে—এটা কি সত্যিই আত্মহত্যা, না কি পরিকল্পিত হত্যা?
নিহত মিথিলার পিতা মৃত মনিরুল শেখ এবং মাতা মোসা: নাহার বেগম। পরিবারটি বাগেরহাট জেলার যাত্রাপুর গ্রাম থেকে বেনাপোলে এসে বসবাস শুরু করে। তারা বর্তমানে ছোট আঁচড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে শফি নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, শনিবার (২৪ মে) দুপুর ১টার দিকে পারিবারিক কলহের জেরে মিথিলা তার কক্ষে আড়ার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তার ছোট বোন প্রথমে ঘটনা টের পেয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় মাকে খবর দেয়। পরে মায়ের দা দিয়ে ওড়না কেটে নামিয়ে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে এখানেই রহস্যের সূত্রপাত। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মিথিলার সঙ্গে পুটখালী এলাকার এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই ছেলেটি প্রায়ই মিথিলাকে দেখা করতে আসত এবং মোটরসাইকেলে করে নামিয়ে যেত। এমনকি মৃত্যুর আগের রাতেও ওই যুবক মিথিলার বাসায় অবস্থান করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে মিথিলার মা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে—স্থানীয়দের অভিযোগ, মিথিলার মা নাহার বেগম তার আগের স্বামীকে হত্যা করে দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং এরপর থেকেই পরিবারটি ছোট আঁচড়ায় বসবাস করতে থাকে। অনেকের মতে, মিথিলার মৃত্যু ‘আত্মহত্যা’ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যাতে প্রকৃত অপরাধ আড়ালে থেকে যায়। কিছু প্রতিবেশীর দাবি, ঘটনাটির পেছনে মিথিলার মায়ের ভূমিকা থাকতে পারে এবং এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
বিষয়টি নিয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে, তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।”
মৃতদেহ বর্তমানে নাভারন হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত নিশ্চিত কিছু বলা না গেলেও, স্থানীয়দের অভিযোগ এবং পারিবারিক অতীত এই মৃত্যুতে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী ও সচেতন মহল একটি নিরপেক্ষ ও গভীর তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তারা মনে করছেন, শুধুমাত্র আত্মহত্যা বলে দায়সারা না করে, নিহত কিশোরীর পরিবারের অতীত ও বর্তমান সম্পর্ক জালনা করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করা জরুরি।
0 মন্তব্যসমূহ