বেনাপোল থেকে রাজু আহমেদ:
দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টমস হাউসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভাজনের প্রস্তাবের প্রতিবাদে কাস্টমস কর্মকর্তাদের 'কলম বিরতি' কর্মসূচি আজ, ২৫ মে রবিবার, থেকে নতুন করে শুরু হয়েছে। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আবারও স্থবির হয়ে পড়েছে, যা অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের এই আন্দোলনের মূল কারণ হলো এনবিআর-কে শুল্ক ও আয়কর - এই দুটি আলাদা বিভাগে বিভক্ত করার প্রস্তাব। 'এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ'-এর ব্যানারে কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই বিভাজন এনবিআর-এর সামগ্রিক কাঠামোকে দুর্বল করবে এবং রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি করবে। তাদের দাবি, এনবিআর-এর বর্তমান কাঠামোই রাজস্ব আহরণের জন্য সবচেয়ে কার্যকর। তারা আশঙ্কা করছেন যে, বিভাজন হলে কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও কর্মপরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
গত ১৪ মে থেকে ২১ মে পর্যন্ত টানা ৬ দিন কাস্টমস কর্মকর্তারা এই একই দাবিতে কলম বিরতি পালন করেছিলেন, যা পরে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় এবং সরকারে পক্ষ থেকে আশানুরূপ কোনো সাড়া না মেলায় 'এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ' ২৫ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নতুন করে কলম বিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে, এই অচলাবস্থা কতদিন চলবে তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত, যা ব্যবসায়ী মহলে চরম উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বেনাপোল বন্দর বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম প্রবেশদ্বার এবং সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। এই কলম বিরতি বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
প্রতিদিন বেনাপোল কাস্টমস হাউস থেকে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। কলম বিরতির কারণে শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ থমকে গেছে। শত শত পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ে আছে বন্দরের দু'পাশে। এতে পচনশীল পণ্য নষ্ট হওয়ার উপক্রম হচ্ছে এবং ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমদানি করা পণ্যের খালাস বিলম্বিত হওয়ায় আমদানিকারকদের ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে। অপরদিকে, রপ্তানি পণ্য আটকে থাকায় বিদেশি বায়ারদের কাছে সময় মতো পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না, যা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে।
কাঁচামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ব্যাহত হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
বন্দর এলাকার শ্রমিক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, পরিবহন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের আয় কমে গেছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে মন্দা সৃষ্টি করছে।
বেনাপোল কাস্টমসের এই কলম বিরতি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। ব্যবসায়ী মহল দ্রুত এই অচলাবস্থা নিরসনের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে, যাতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আবারও স্বাভাবিক গতি ফিরে পায়।
0 মন্তব্যসমূহ