আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যেকোনো ইস্যুতে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে ভারত। এমন বার্তা দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন পদ্ধতি ও ফোরাম রয়েছে, যা উভয় দেশই সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করে আসছে।
জয়সওয়াল এই মন্তব্য করেন এমন এক সময়, যখন ভারতীয় সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসতে যাচ্ছে। এই বৈঠকে ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ’ নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন সাবেক কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
ভারতের প্রতিক্রিয়া এমন এক সময়ে এসেছে যখন ১৯ জুন চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “ভারত তার নিজস্ব স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন সব আঞ্চলিক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।” তিনি আরও বলেন, ভারতের প্রতিটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাধীন, তবে তা আঞ্চলিক পরিস্থিতির কারণে প্রভাবিত হতে পারে।
আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য সংসদীয় বৈঠকে অংশ নেবেন চারজন বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ। তারা ভারতীয় সংসদ সদস্যদের সামনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ব্রিফিং দেবেন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে:
-
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থা এবং মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা
-
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ
-
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের কূটনৈতিক কৌশলে পরিবর্তন আনা জরুরি। তাদের মতে, বাংলাদেশে এই ভুল ধারণা দূর করা প্রয়োজন যে ভারত শুধু একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের — বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকার — পাশে ছিল, সাধারণ জনগণের পাশে নয়। এর ফলে দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন সহজ হবে এবং জনমতের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, চীনের প্রভাব বৃদ্ধি, এবং আঞ্চলিক ভূরাজনীতির জটিলতা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আবারও নতুন করে মূল্যায়নের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিল্লি এখন আরও বেশি সচেতন যে শুধু সরকার নয়, বরং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সাথেও সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।
ভারতের পক্ষ থেকে এমন বার্তা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক কূটনৈতিক ইঙ্গিত। এটি প্রমাণ করে, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক শুধু সরকার নয়, বরং জনগণ, নিরাপত্তা এবং কৌশলগত স্বার্থের বিষয়েও সমভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই আলোচনার বার্তা মাঠপর্যায়ে কীভাবে প্রতিফলিত হয়।
সূত্র: দ্য হিন্দু
0 মন্তব্যসমূহ