Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Responsive Advertisement

বেনাপোলে ভারী বর্ষণে বন্দর ও কাস্টমস হাউস প্লাবিত,ছয় সদস্যের কমিটি গঠিত হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই।



বেনাপোল থেকে রাজু আহমেদঃ 

টানা বৃষ্টিপাত ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বেনাপোল পৌরসভার কয়েকটি গ্রাম, স্থলবন্দর এবং কাস্টমস হাউস পানিতে প্লাবিত হয়েছে। গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে পৌরবাসীর অনেক এলাকায় ঘরের ভেতর পানি ঢুকে গেছে। বেনাপোলের প্রাণকেন্দ্র কাস্টমস হাউসে হাঁটুসমান পানি জমেছে। পাশাপাশি বন্দরের ৯, ১২, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর শেডেও পানি জমে পণ্য উঠানামা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পৌরসভার দিঘিরপাড়, বড়আঁচড়া, ভবেরবেড়সহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কাস্টমস হাউস ও বন্দরের শেডগুলোতেও পানি জমেছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সেলো মেশিন বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

দিঘিরপাড় গ্রামের চায়না বেগম বলেন, “আমরা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না, এমনকি রান্নাও বন্ধের উপক্রম হয়েছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিষয়টি বেনাপোল পৌরসভাকে জানানো হলেও এখনো পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী এবং বিএনপি কর্মী সাইফুল ইসলাম আসাদ বলেন, “প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এখানে জলাবদ্ধতা হয়। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ বাড়ির ট্যাক্স, পানির বিল সব কিছুই নিচ্ছে, কিন্তু পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা সবাই চরম দুর্ভোগে আছেন।” তিনি জানান, এ ব্যাপারে বেনাপোল পৌর প্রশাসক ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী নাজীব হাসানকে অবহিত করা হয়েছে।

বেনাপোল পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর রাশেদ আলী বলেন, “আমি নিজেও জলাবদ্ধতায় আটকে আছি। যখন কাউন্সিলর ছিলাম, তখন কয়েকবার পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু একটি পরিবার সামান্য জায়গা না দেওয়ায় সেখানে ড্রেন নির্মাণ করতে পারিনি। ওই পরিবার জায়গা না দেওয়ার পাশাপাশি ১৪৪ ধারা জারি করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।”

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার আবু সালেহ নুর বলেন, “টানা বৃষ্টির কারণে হাউসের ভেতর পানি জমে গেছে এবং আবাসিক ভবনের নিচতলার অনেক রুমে পানি ঢুকেছে। মসজিদ থেকে প্রধান সড়ক পর্যন্ত হাঁটুপানি জমে রয়েছে। মূলত পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।”

বেনাপোল স্থল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার বলেন, “স্থায়ীভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে হলে সময় লাগবে অন্তত দুই বছর। এখানে নতুন করে পরিকল্পনা করে ড্রেন নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য অর্থ বরাদ্দও প্রয়োজন। আপাতত সেলো মেশিন দিয়ে যতটুকু সম্ভব পানি সরানোর চেষ্টা চলছে।”

এদিকে গত ৯ জুলাই জলাবদ্ধতা নিরসনে বেনাপোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার একটি ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করলেও এখন পর্যন্ত কার্যত কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। ওই কমিটির স্পষ্ট বক্তব্য—জলাবদ্ধতা নিরসন করতে হলে দীর্ঘ সময় লাগবে, এখন কিছু করা সম্ভব নয়।

এভাবে বেনাপোলের হাজারো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রতা এবং যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে সমস্যা দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ